গাজওয়াতুল হিন্দ

সাম্প্রতিক কমেন্টগুলি

টেবল অফ কন্টেন্ট
< পিছনে আসুন
প্রিন্ট

ইমাম মাহমুদের আদ্যোপান্ত এর তালাশে

জন্মস্থানঃ

মাহমুদের জন্ম নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া থানার ১নং পাকা ইউনিয়নের উত্তর গাওপাড়া গ্রামে। মূল শহর থেকে গাওপাড়া গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৩০ কি.মি.। গাওপাড়া গ্রামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য রেলপথ। গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়া রেলপথ গ্রামটাকে দুই অংশে বিভক্ত করেছে। উত্তর গাওপাড়া এবং দক্ষিন গাওপাড়া।

পারিবারিক পরিচিতিঃ

মাহমুদের পিতার নাম আব্দুল ক্বদির। মাতার নাম সাহারা। মাহমুদের ৩ বছরের বড় এক ভাই নাম মাসউদ। মাহমুদের দাদার নাম আবুল হোসেন মোল্লা। নানার নাম রিয়াজ উদ্দিন।

বংশ পরিচিতিঃ

প্রচলিত বংশে মাহমুদ মোল্লা বংশের সন্তান। তবে গাওপাড়া গ্রামে গফুরের বংশ বলেই পরিচিত। মাহমুদের দাদা আবুল হোসেন মোল্লার পিতার নাম আব্দুল গফুর। গ্রামে প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন নিরীহ বংশ বলেই পরিচিত গফুরের বংশ। মাহমুদের নানার বংশও মোল্লা বংশ। নানার বাড়ি গাওপাড়া গ্রামের অন্য অংশ দক্ষিন গাওপাড়ায়।

মাহমুদের অনুসারীদের দেওয়া হাদীসে পাওয়া যায়, মাহমুদ হযরত উমার (রাঃ) এর বংশধর। নিচে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল:

عَنْ قَتَادَةَ ؓ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوشِكُ يَكُونُ قِتَالُ الْمُؤْمِنِينَ مَعَ الْمُشْرِكِينَ،  مَا أَحْسَنُ شُهَدَاءُ ذَلِكَ : قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ! مَنْ يُأَمِّرُ ذَلِكَ الْقِتَالَ ؟ قَالَ شَابٌّ ضَعِيفٌ مِنْ نَسَبِ عُمَرَ

হযরত কাতাদাহ (রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি জিহাদ হবে। আর সেই যুদ্ধের শহীদরা কতই না উত্তম। আমি বললাম, হে রসূল (ছঃ)! সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন কে? তিনি বললেন, উমর (রঃ)-এর বংশের এক দুর্বল বালক। (কিতাবুল ফিরদাউস, ৭৮৭)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْثُرُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ عُلَمَاءُ الضَّالِّينَ ، يَذْهَبُ بِالدِّينِ إِلَى أَحْوَالِ الْمَوْتِ ، فَيَبْعَثُ اللَّهُ فِيهِ شَابًّا مِنْ نَسَبِ عُمَرَ يُحْيِي بِهِ الدِّينِ

হযরত আবু হুরায়রা (রঃ) বলেন, রসূল (ছঃ) বলেছেন, শেষ জামানায় পথভ্রষ্ট আলেম বৃদ্ধি পাবে। আর তারা দ্বীনকে মৃত্যুর অবস্থায় নিয়ে যাবে। ঠিক তখন আল্লাহ তা’য়ালা হযরত উমার (রাঃ) -এর বংশ থেকে একজন বালককে পাঠাবেন। যার মাধ্যমে দ্বীন জীবিত হবে। (কিতাবুল ফিরদাউস, ৮০৬)

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ؓ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ الْمَهْدِيُّ مِنْ اَهْلِ بَيْتِي بِنْتِي فَاطِمَةَ وَلَكِنْ يَخْرُجُ قَبْلَهُ أَمِيرٌ اسْمُهُ مَحْمُودُ بْنُ عَبْدِ الْقَدِيرِ ، يَأْتِي مِنْ بَلَدِ مَشْرِقِ الْهِنْدِ

বাংলা অনুবাদঃ হুযাইফাতুল ইয়ামান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার কন্যা ফাতিমা আমার বংশধর (পরিবার) থেকে খলিফা মাহদীর অবির্ভাব হবে। তবে তার পূর্বে একজন আমীরের প্রকাশ ঘটবে যার নাম হবে মাহমুদ বিন আব্দুল কাদির। সে হিন্দুস্থানের পূর্বাঞ্চল থেকে আসবে। (ফিতনাতুদ দুনিয়া, আবু নাইম আল ইস্ফাহানী, পৃষ্ঠা ১৩১, হাঃ ১১৮; কিতাবুল আকীব ২৩৮)

জন্মঃ

যেহেতু মাহমুদের অনুসারীরা মাহমুদকে আধ্যাত্মিক নেতা মনে করে। সেহেতু মাহমুদের জন্মের সময় কোন আধ্যাত্মিকতার আলামত বা চিহ্ন ছিলো কিনা। তা জানার জন্য মাহমুদের মা কে প্রশ্ন করলে তিনি একটা ঘটনা বর্ণনা করেন। ঘটনা এরুপ ছিল যে, যখন মাহমুদ গর্ভে ছিল, তখন তার মা একটা স্বপ্ন প্রায়ই দেখত। তিনি স্বপ্নে দেখতেন, কেউ একজন বলছে, “সাহারা তোমার পেটে আল্লাহ একটি উত্তম ছেলে দান করেছেন, যে নিজে নামাজী হবে এবং নামাজীদের হুজুর হবে। তার নাম রাখবে মাহমুদ”। একই স্বপ্ন কয়েকবার দেখার পর সাহারা তার স্বামীকে স্বপ্নের ব্যাপারে জানান। তখন মাহমুদের পিতা আব্দুল ক্বদির অবাক হয়ে বলেন, “আমি নিজেও তো একই স্বপ্ন দেখেছি”। তিনি স্ত্রী সাহারাকে এ বলেও নিষেধ করে দেন যে, যাতে অন্য কাউকে এ স্বপ্নের ব্যাপারে না বলে। যদি ছেলে হয় এবং বড় হয়ে সত্যি সত্যি হুজুর হয় তবে সবাই এমনি জানতে পারবে। আরবি ১৪১৬ হিজরি জুমাদিউল আউয়াল মাসের ৬ তারিখ ইংরেজি ১৯৯৫ সালের পহেলা অক্টোবর সকালে জন্মগ্রহণ করে মাহমুদ। বাবা মায়ের দেখা স্বপ্নের প্রথম অংশ বাস্তবে রুপান্তর হলো।

নামকরনঃ

স্বপ্নের দেওয়া নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখা হলো, মাসউদ এর ভাই মাহমুদ। মাহমুদের দূর সম্পর্কীয় ফুফাতো ভাই হাফেজ জিয়াউর রহমান। সে ছিল একজন কুরআনের হাফেজ। বড় হয়ে যাতে তার মতোই কুরআনের হাফেজ হতে পারে, তাই সে তার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখতে বলে জুয়েল। শেষে দুটো নাম মিলিয়ে রাখে জুয়েল মাহমুদ। অবশ্য পরিচিত অনেকে তাকে সোহেল বলেও ডাকে। আদতে ‘সোহেল’ মাহমুদের আলাদা কোনো নাম নয়। জুয়েল নামই মুখে মুখে সোহেলে রুপান্তর হয়েছে।

পারিবারিক অবস্থাঃ

জীবনের শুরু থেকেই মাহমুদের জীবন ছিল দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। মাহমুদের বাবা শারীরিক দুর্বলতার দরুন পরিশ্রমের কাজ করতে পারত না। ফলে স্বল্প পরিশ্রমে কোন মতে সংসার চালিয়েছেন। দারিদ্রতার অন্যতম আরেকটা কারণ ছিল বড় ছেলে মাসউদ এর নিয়মিত অসুস্থতা। আব্দুল ক্বদির ছিলেন অত্যাধিক নম্র স্বভাবের ব্যক্তি। গ্রামে কোনদিন কারো সাথে কথা কাটাকাটি পর্যন্ত হয় নাই। এখন পর্যন্ত গ্রামের মানুষ তার নামে প্রশংসা সূচক কথাবার্তাই বলে। পারিবারিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ছোটবেলার আনন্দঘন মুহূর্ত পায়নি মাহমুদ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকেই কাজের সাথে যুক্ত হতে হয়।

শিক্ষা জীবনঃ

যদিও মাহমুদের পিতা আব্দুল ক্বদিরের পুথিগত কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না। তবুও তিনি ছোটবেলা থেকেই চেস্টা করেছেন ছেলেকে উত্তম ভাবে গড়ে তোলার। পারিবারিক শিক্ষার গন্ডি পেড়িয়ে ২০০২ সালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য মাহমুদকে ভর্তি করা হয় সালিমপুর মালিগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকাকালীন মাহমুদের মেধার তেমন সাক্ষর পাওয়া যায় না। স্বল্প সময়ে ৫ম ক্লাসেই সাধারন শিক্ষার পাঠ শেষ হয়।

মাদ্রাসা পাঠঃ

২০০৬ সালে গাওপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয় মাহমুদকে। স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার কারণ ছিল বাবা মায়ের স্বপ্ন। পাশাপাশি দাদা নানা দুজনেরও ইচ্ছে ছিল নাতি মাদ্রাসায় পড়বে। মাদ্রাসায় প্রথম কুরআন হাতে নেওয়ার দিনটি ছিলো পরিবারের সবার জন্যে আনন্দের। যেহেতু পরিবারের প্রথম সদস্য হিসাবে কুরআন হাতে নিয়েছিলো মাহমুদ। সে ঘটনা যেন এখনো পরিবারের সদস্যদের চোখে জ্বলজ্বল করছে। সেদিন মেঝো চাচা আব্দুর রহমান খুশিতে বাড়িতে ছোট খাটো একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলো। এমনকি প্রথম কুরআনটিও মেঝো চাচাই কিনে দিয়েছিলো। মাদ্রাসায় পড়াকালীন মসজিদের ইমামের অনুপস্থিতে মাঝে মাঝে নামাজের ইমামতি করত মাহমুদ। এরই সুবাদে চিথলীয়া সরকার পাড়া জামে মসজিদে স্থায়ীভাবে জুমআর নামাজের ইমাম হিসাবে নিয়োগ পায়। স্থানীয়ভাবে জানা গেলো এখানে মাহমুদ সে সময় একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছিল। আগ্রহীরা পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়তো। গাওপাড়া মাদ্রাসায় শিক্ষকের সাথে রাজনৈতিক মত পার্থক্যের কারনে মাদ্রাসা ত্যাগ করে মাহমুদ। কিছু সময় বিরতি দিয়ে বাঘা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। এখানে একই সাথে মসজিদ, মাদ্রাসা ও মাজার ছিলো। দেশের অন্যান্য মাজারের মত এই মাজারেও বিভিন্ন শিরকি কার্যক্রম চলতো। মাদ্রাসায় পড়াকালিন মাহমুদ বিভিন্ন উপায়ে শিরকি কর্মকান্ড বন্ধ করার চেস্টা করেন। যার কারনে কমিটির সাথে বিরোধ হয়। সর্বোপরি মাদ্রাসা জীবনে মাহমুদ নাজরানা পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে।

রাজনৈতিক জীবনঃ

মাহমুদের এক সময়ের রাজপথের সাথীদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগদানের মাধ্যমে মাহমুদ তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করে। পাঠাগারে কাজের সুবাদে পরিচয় হয় ১নং পাকা ইউনিয়নের ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান মিলনের সাথে। এক পর্যায়ে ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দ মাহমুদের মধ্যে যোগ্যতা দেখতে পেয়ে প্রথম অবস্থাতেই তাকে পাকা ইউনিয়নের অন্তর্গত ৯নং ওয়ার্ডের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। ছাত্র শিবিরের যোগ দেয়ার পর থেকে মাহমুদ দলের জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করতে থাকে। যেমন- দল সম্পর্কে দাওয়াতি কাজ করা, ছাত্র জনশক্তি বাড়ানো, সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো, দলীয় বই বিক্রি বৃদ্ধি করা, ইয়ানত সংগ্রহ ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য কাজ, ইউনিয়ন পর্যায়ে সভাপতি থাকাকালীন এলাকায় সাংস্কৃতিক বিনোদনের নামে যেসব অশ্লীলতা, মাদক, জুয়ার আসর বসতো; সেসব বন্ধের চেস্টা করা। এ কাজে মাহমুদকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। কেননা এ সমস্ত কাজের পিছনে ছিল বড় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় মাতব্বররা। দ্বিতীয়, ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পদে থাকাকালীন ইউনিয়ন পর্যায়ের দলের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ। যা দীর্ঘকাল ধরে বকেয়া ছিলো, এ বিষয়টা দলের সবার নজরে আসে। পাকা ইউনিয়ন ছিল রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের ঘাটি। পাশাপাশি হিন্দু ধর্মালম্বী লোক সংখ্যাও উল্লেখ্য। এমন প্রতিকুল পরিবেশে কাজ করা ছিল কঠিন। তা সত্ত্বেও মিছিল-মিটিং, সমাবেশ সর্বক্ষেত্রে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে মাহমুদ। ২০১১ সালে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় আটকের প্রতিবাদে নাটোর এ জামাত-শিবিরের পক্ষ থেকে মিছিল হয়। মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে মাহমুদ আহত হয় । ১৩ সালে হেফাজত ইসলামের আন্দোলনে রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে জনসভায় মাহমুদ তার বিশাল সংখ্যক কর্মীবাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিল। ১৩ সালের ৫ই মার্চ ঢাকার শাপলা চত্বরের জনসভায়ও উপস্থিত ছিল মাহমুদ। দলের সাথে মত পার্থক্যের কারনে ১৪ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে মাহমুদ। অবশেষে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে দলের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কচ্ছেদ। মত পার্থক্যের কিছু কারণও পাওয়া গেল।

  • ১) জিহাদ নিয়ে বিরোধঃ জামায়াত শিবিরের সংজ্ঞা মতে জিহাদ মানে মিছিল মিটিং। কিন্তু মাহমুদ বলেছিলো, ‘জিহাদ করলে করতে হবে আল্লাহর রসুল (ছঃ) ও তার সাহাবীরা (রাঃ) যেভাবে করেছেন।
  • ২) মূল্যায়নঃ দলে শুধু তাদের মূল্য ছিল যারা অর্থ দাতা ও প্রভাবশালী। সাধারনদের মূল্যায়ন ছিল না।
  • ৩) সুদঃ দল থেকে ফ্রি লোন নামে সমবায় সমিতি গঠন। মৌখিকভাবে সুদ না বললেও আদতে তা ছিল সুদের কারবার। এ ব্যাপারে সুষ্ঠুব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো যারা প্রতিবাদ করেছে তাদেরকেই দল থেকে বহিষ্কার।

প্রায় সাড়ে ৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মাহমুদ বিভিন্ন পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে।

পদগুলোঃ

পাকা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি, পাকা ইউনিয়নের সভাপতি, পাকা ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক, উপজেলার পাঠাগার সম্পাদক, উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক। সমর্থক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ছাত্র শিবিরের ‘সদস্য প্রার্থীও’ হয়েছিল মাহমুদ। জেলা পর্যায়ে জামায়াত শিবিরের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল মাহমুদের। দল করা অবস্থায় মাহমুদ যেমন সাথী, বন্ধু, শুভাকাংখী পেয়েছে। তেমনি প্রতিপক্ষ, শত্রুও হয়েছে অনেক।

রাজনৈতিক জীবনে মাহমুদকে নিয়ে এক ষড়যন্ত্রঃ

২০১৩ সালে শিবিরের হয়ে মাহমুদ কেবল রাজনীতির মাঠে পরিচিতি পাচ্ছিল। এই অবস্থায় রাজনীতির বন্ধুর মাঠে মাহমুদ এমন এক চাল দিলো যা তাকে সবার কাছে পরিচিত করে দিল। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত শিবিরের দ্বন্দ্ব চলমান। এলাকায় মেম্বার নির্বাচন উপলক্ষে তা আরো বাড়তি মাত্রা যোগ করে। বাগাতিপাড়া আওয়ামী সমর্থিত। স্বাভাবিকভাবে কাজ করলে ফলাফল ভাল হবে না। কি করা যায়, ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো জনগনের সামনে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের আসল রূপ উন্মোচন করার। জনগণ ভাবতো ক্ষমতাশীলরা ইসলাম পছন্দ করে। যেহেতু তারা লেবাসে, মুখে দাবি করে। কিন্তু জনগণ প্রকৃত অবস্থা জানত না। মাহমুদ প্রকৃত অবস্থা সামনে আনার পরিকল্পনা নিলো।

পরিকল্পনা এরূপ, মালিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠ। মাঠে গান-বাজনা নাটকসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু কখনোই ওয়াজ মাহফিল আয়োজন হয় না। মাহমুদ উদ্যোগ নিলো সে মাঠেই মাহফিল করার। যদিও মাহমুদ জানত এ মাঠে মাহফিল করতে দেবে না। মাহমুদের উদ্দেশ্য মাহফিল করা নয়। উদ্দেশ্য জনগণের সামনে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা। মাহফিল উপলক্ষ্যে মাহমুদ দলীয় কর্মীদের প্রচার প্রচারণা করতে বললো। কর্মীরা লিফলেট, পোস্টার, মাইকিং করল। এলাকার মসজিদে মসজিদেও বলে দিলো মাহফিলের কথা। মাহফিলের খরচের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে কালেকশনও শুরু হয়। মাহফিলের খবরে বিরোধীদের মনে দাবানল সৃষ্টি হয়। তাঁরা মাহফিল বন্ধে বিভিন্ন স্থানে গোপন মিটিং শুরু করে। একশন হিসেবে লিফলেট, পোস্টার ছিড়ে ফেলে, কর্মীদের মসজিদ থেকে বের করে দেয়। এমনকি হুমকি পর্যন্ত দেয় যে “মাহমুদকে মেরে ফেলে লাশ গাওপাড়া গ্রামকে উপহার দেবো”। মাহমুদ যে ফাঁদ তাদের জন্যে পেতেছিল, সেখানে প্রতিপক্ষ আস্টেপিষ্টে জড়িয়ে গেলো। এবারে জাল গুটানোর পালা। সে মোতাবেক মাহমুদ তার কর্মীদের বলেছিল, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে।

যেহেতু এ মাঠে কখনোই মাহফিল হয় নাই, তাই আমরা মাহফিল আয়োজন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের বাধার মুখে পারলাম না। সেজন্য আয়োজন বাদ দিলাম। মাহফিল উপলক্ষ্যে টাকা-পয়সা, ধান, চাল যা কিছু কালেকশন করা হয়েছে তা স্থানীয় মসজিদে দান করে দিবো। এই ঘোষণায় জনগণ আওয়ামী লীগের লোকদের, যারা মাহফিলে বাধা দিয়েছে তাদের প্রতি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়। যার প্রভাব পরে নির্বাচনের ফলাফলের উপর। নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিপক্ষ বুঝতে পারে, এটা আদতে একটা রাজনৈতিক চাল ছিল। তখন আলাম মেম্বার, সম্পর্কে মাহমুদের খালাতো ভাই এর ভায়রা প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করলো, “মাহমুদ রাজনীতি করলো, আমিও দেখব কিভাবে মাহমুদ রাজনীতি করে। রাজনীতির মাঠ থেকে বোল্ড আউট করে দিবো।” এই চ্যালেঞ্জ সে পুরা করেছিল ১৫ সালের মিথ্যা নারী ঘটিত ইভটিজিং মামলা দিয়ে। একদিন সকালে কিছু সিভিল ড্রেসের লোক একটা মাইক্রো করে নিয়ে যায়। নিয়ে যায় বাগাতিপাড়া থানায়। পুলিশ ইভটিজিং মামলা দিলো ক্ষমতাশীলদের চাপের কারনে। এই মিথ্যা মামলার খবর ফোকাস করে যমুনা টিভির প্রোগ্রাম “Investigation 360°”। আমি মাহমুদের নিজ এলাকা রামপাড়া, দাড়ামুধা সহ আরো কয়েক স্থানে, যেসব স্থানে মাহমুদ অল্প কিছুকাল হলেও অবস্থান করেছে। সেসব স্থানের যারা মাহমুদকে চিনতে পারল তাদের সাথেও কথা বলেছি। স্থানীয়দের থেকে জানতে চেয়েছি মাহমুদ সম্পর্কে। তারা মাহমুদের ব্যাপারে ভাল ছাড়া ভিন্ন কিছু বলল না। তাদেরকে নারী ঘটিত ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করলাম। তারা উত্তর দিলো এখন পর্যন্ত কখনোই মাহমুদকে এমন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত পাইনি। তারা বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখালো। বললঃ এইগুলা তারা মিথ্যাচার করেছে। যে স্বয়ং এই ঘটনার ভুক্তভোগী সেই মাহমুদের সাথেও কথা বলতে চেয়েছি।

কিন্তু বর্তমানে সে জেলে থাকায় তার সাথে কথা বলতে সক্ষম হইনি। তার সাথে কথা বলতে পারলে ঘটনার আরো বিস্তারিত জানা যেত। ইভটিজিং মামলায় আড়াই মাস জেল খেটে ৩০শে নভেম্বর জামিনে বের হয় মাহমুদ। কিন্তু এরপরে পেরিয়ে যায় আরো প্রায় ৯ বছর। এই সময়ের মধ্যেও মামলার চার্জশিট জমা হয়নি। এমনকি কোন সাক্ষ্য গ্রহণের খবরও পাওয়া যায়নি। বিনা পদক্ষেপেই মামলা ডিসমিস (Dismiss) হয়ে যায়। এ মিথ্যা মামলা দেয়ার পিছনে আলাম মেম্বার সহ ৪ জনের নাম জড়িত হিসেবে পাওয়া গেল।

  • ১. আলাম মেম্বার: ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার
  • ২. জুনাব মাস্টার: ১ নং ইউনিয়ন ভুক্ত রামপাড়া ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সভাপতি।
  • ৩. রুবেল হোসেন: রুবেল ছিল ১নং পাকা ইউনিয়নের তৎকালীন এবং বর্তমানেরও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর ছোট ভাই।
  • ৪. হাকিম মেম্বার: তৎকালীন সময়ের বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের নূরপুর ওয়ার্ডের মেম্বার ও বর্তমানের বাগাতিপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান।

৪ জনের সবাই ক্ষমতাশীল আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

বাবার মৃত্যুঃ

২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাহমুদের বাবা পরলোক গমন করেন। মৃত্যুর কারণ ছিল ক্যান্সার। পেটের আলসার থেকে ক্ষতের সৃষ্টি, ক্ষত থেকে ক্যান্সার। অর্থনৈতিক কারণে সুচিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেনি পরিবার।

পেশাঃ

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে মাহমুদ ইমামতি ও মাদ্রাসার পেশায় নিযুক্ত ছিলো। কিছু তথ্য তার মা আর কিছু তথ্য মাহমুদের কর্মস্থল থেকে নেওয়া। তার মধ্যে ছিল চিথলীয়া, সিংড়া, ঝিনা, রামপাড়া, পাবনার দাড়ামুধা এবং রাজশাহী। ২০১৬ সালে মাহমুদ বাংলাদেশ নিয়ামতে ভরা কুরআন শিক্ষা সোসাইটিতে ১ মাস ট্রেনিং করে। সোসাইটির কাজ ছিলো ভর্তিকৃত ব্যক্তিদের ট্রেনিং দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া। ট্রেনিং শেষে মাহমুদকে সিরাজগঞ্জ পাঠিয়ে দেয়। কয়েক মাস পরের পরিচালক সভায় মাহমুদের যোগ্যতা বিবেচনা করে মাহমুদকে সিরাজগঞ্জের পরিচালক পদে দেওয়া হয়। দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের দরুন মাহমুদকে আরো বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাহমুদকে ৩ জেলার- নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জের পরিচালক করা হয়। এই সোসাইটি থেকে ফ্রি কুরআন শেখানোর নামে প্রতারণা করা হত। ক্লাস চালু করা হত ফ্রি ক্লাসের কথা বলে। কোন টাকা পয়সা লাগবে না। কিন্তু ভর্তির কয়েকদিন বাদেই ভর্তি ফির কথা বলে ২০০ টাকা নেওয়া হতো। ১৫-২০ দিন বাদে কুরআন ধরানোর নামে হাদিয়া চাওয়া হয়। হাদিয়া কখনো ৫০০, সামর্থ্যবান হলে ২০০০ পর্যন্ত পৌঁছাতো। এর কিছুদিন পর সোসাইটি থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটা কুরআন কেনা বাধ্যতামূলক। মূল্য নেয়া হয় ১২০০ – ১৫০০ টাকা। সোসাইটির প্রতারণা বুঝতে পারার পর ২০১৮ সালে সোসাইটি থেকে ইস্তফা দেয় মাহমুদ।

যেখান থেকে আলোচনা সমালোচনা শুরুঃ

১৭ সালের শুরুর দিকে মাহমুদ ইমামতির কাজে যায় পাবনার দাড়ামুধা গ্রামের ‘হযরত ওমর ফারুক (রঃ) জামে মসজিদ’ এ। অক্টোবর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই ছিলো। মসজিদের মুসুল্লিরা তাদের নতুন ইমামকে নিয়ে খুশি। দাড়ামুধা গ্রামের মসজিদে মাহমুদের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা পাওয়া যায় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে। হঠাৎ একদিন মাহমুদ তাঁর হুজুরাখানার বাইরে জোহরের নামাজের পর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। মাহমুদের এ অবস্থা দেখে কয়েকজন দৌড়ে আসলো। মাহমুদকে ধরাধরি করে হুজুরাখানায় নিয়ে যায়। সে অবস্থায় মাহমুদের শরীর থরথর করে কাঁপছিল এবং মুখ দিয়ে বিড়বিড় করছিলো। ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর থেকে জানা যায়, মাহমুদ আল্লাহ প্রদত্ত একজন ব্যক্তি। তার কাছে আল্লাহ ইলহাম পাঠান। শুরু হয়েছে ঐ ঘটনা দিয়ে। ঘটনার বর্ণনা এরূপ পাওয়া গেল: “ওইদিন ঘরের ভেতর থাকা অবস্থায় মাহমুদ একটি কন্ঠ শুনতে পায়। তাকে বাইরে যেতে বলে। ২-৩ বার ডাকার পর কে ডাকছে দেখার জন্য হুজুরাখানার বাইরে ৪-৫ কদম এগিয়ে ছোট আম গাছের নিচে দাঁড়ায়। তখন একই কন্ঠস্বর বলে “উর্ধ্বআকাশে তাকান”। উর্ধ্বআকাশে তাকাতেই মাহমুদের স্বাভাবিক জ্ঞানশক্তি হারিয়ে যায়। জ্ঞানশক্তি হারানোর আগেই মাহমুদ দেখতে পেয়েছে গোটা আকাশ আলোকিত, এ অবস্থাতেই তার উপর ইলহাম আসে”।

দাড়ামুধা গ্রামে মাহমুদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা খুবই কঠিন ছিল। নতুন কেউ হলে প্রশাসন পর্যন্ত খবর চলে যায়। গ্রেফতারের আশঙ্কা নিয়ে সতর্কতার সহিত চেষ্টা করেছি গ্রামের কয়েকজনের সাথে কথা বলার। কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে একটা ইলহাম দেখতে দিলো, যা মাহমুদের কাছে আসা প্রথম ইলহাম হিসেবে পরিচিত।

. নিশ্চয়ই আমি আপনাকে উর্ধ্বআকাশে আমার বার্তাবাহক ফেরেশতা "রুহ" কে দেখিয়েছি. যখন আপনি ভীত কন্ঠে কম্পিত অবস্থায় বারবার বলছিলেন, হে আমার রব, আমাকে উঠিয়ে নাও আমি  দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছি. অতঃপর বললাম, আমিই তো সেই রব, যিনি আসমান  জমিনের স্রষ্টা. আর আপনার রবের সাহায্যেই আপনার জন্য যথেষ্ট. আপনি চিন্তিত হবেন না আর ভীতও হবেন না নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার সাথে আছেন

এ অংশে ইলহাম সম্পর্কে কিছু দলিল উল্লেখ হলো যা আলেম-ওলামা এবং মাহমুদের অনুসারীদের থেকে নেওয়া।

কুরআন থেকেঃ

“তিনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী আরশের অধিপতি। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা প্রেরণ করেন স্বীয় আদেশ সমূহ, যাতে সে সতর্ক করতে পারে কিয়ামাত দিবস সম্পর্কে।” (সূরা মুমিন : ১৫)

হাদীস থেকে:

عَنْ أَنَسٍ ؓ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : يَجِدُ أَوْلِيَاءُ اللهِ كَلِمَتَهُ ، وَيَجِدُ بَعْضُ الرِّجَالِ بَعْدِي لَيْسُوا مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، أَوْلِيَاءُ اللّٰهِ

হযরত আনাস (রঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসুল (ছঃ) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর বন্ধুগণ আল্লাহর বানী পাবেন। আর আমার পরেও কিছু ব্যক্তি পাবে। আর তারা নবী না, আল্লাহর বন্ধু। (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস, আবু মানসুর আব্দুল্লাহ ইবনে দাইলামী হাদীস: ১০৮৫)

পূর্ববর্তী ইতিহাসেও ইলহাম সম্পর্কে দলিল পাওয়া যায়। যেমন ইব্রাহিম ইবনে আদহাম। ইমাম নাসাই (রহঃ) তার সম্পর্কে বলেন, ইব্রাহিম ইবনে আদহাম ছিলেন নির্ভরযোগ্য আমানতদার ও পরহেজগারদের অন্যতম। ইব্রাহিম ইবনে আদহাম সম্পর্কিত দলিল পাওয়া যায় ইবনে কাসিরের গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ায়’ (খণ্ড-১০, পৃষ্ঠাঃ ২৩৮-২৩৯)।  আরো দলিল পাওয়া যায় ‘নবীজির পদাংক অনুসরণ’ নামক বই এ আবু খাইর আল আও রহঃ সম্পর্কে (পৃষ্ঠা ৫৯)। একই বইয়ের পৃ. ৬৫-তে ইসহাক ইবনে ওববাদ (রহিঃ) আল বসরী সম্পর্কে ইলহামের ঘটনা উল্লেখ করেন।

ভারতীয় উপমহাদেশ খ্যাত দেওবন্দের আকাবির শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলবি (রহিঃ) তার ‘আল আকিদাতুল হাসানাহ’ নামক বইয়ের ৮৬ পৃষ্ঠায় ইলহাম সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। বইটির অনুবাদক আলী হাসান ওসামা। ইলহাম আসার আগ পর্যন্ত মাহমুদের জীবনে খুব বেশি সংকটকাল আসেনি। যেখানেই অবস্থান করেছে মানুষ তাকে ভাল বলেই জেনেছে। তবে যত সব সমস্যা শুরু হয় ইলহাম আসার পর। এরপর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত মাহমুদকে হুমকি মনে করে। যার কারণে মাহমুদের জীবনে নিত্যসঙ্গী হয়েছে খারাপ ব্যবহার, গালাগালি, কটূক্তি, অপবাদ, মারধর, এলাকা ছাড়া, জানমালের হুমকি, জেলবন্দি।

মাহমুদের কাছে ইলহাম আসার পর থেকে মানুষ ৩ অংশে বিভক্ত হয়েছে। এক অংশ বিশ্বাস করে যে, ইলহামগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে। এক অংশ নীরব দর্শক ভূমিকা পালন করে। আর এক অংশ বিভিন্নভাবে মাহমুদের বিরোধিতা করে। শেষের অংশের মানুষরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, অর্থশালী, ক্ষমতার আসনে আসীন।

মাহমুদের বিরুদ্ধে বিরোধিতার ফলাফল এই যে, সাধারণ মানুষ এর দাবি, কেন সে প্রচলিত ইসলাম পালন করে না, যা আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে করছি। আলেম-ওলামাদের দাবি, কেন আল্লাহ মনোনীত করলো একজন সাধারণ মানুষকে, যেখানে আমরা এত বছর ধরে ইসলামে আছি, বড় বড় ডিগ্রিধারী, এত এত জ্ঞানী। আর রাষ্ট্রের দাবি, কেন সে জিহাদ করতে চায়। অন্যান্য হুজুরদের মত কেন মসজিদে পড়ে থাকে না অথবা গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় না। কেন তাকে কুরআন-সুন্নাহ দিয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইলহামের ঘটনার পর থেকে আস্তে আস্তে মাহমুদ দলিলবিহীন চলতে থাকা প্রচলিত ইসলাম বাদ দিতে থাকে। যা নিয়ে দাড়ামুধা গ্রামে প্রায় ১ বছর প্রভাবশালীদের সাথে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। যেমনঃ সমালোচনা, ওহাবী বলে গালি দেওয়া, খারেজি বলে ফতোয়া দেওয়া, নামাজে বাধা দেওয়া, মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি মাহমুদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সে দাড়ামুধা ত্যাগ করে নিজ গ্রামে চলে যায়। নিজ গ্রামেও একই অবস্থা চলতে থাকে। সাধারণ মানুষ তাকে মেনে নিতে পারে নি। আলোচনা-সমালোচনা করতে থাকে। যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান চলছেই।

হাদীস:

এ পর্যায়ে মাহমুদ সম্পর্কে কিছু হাদীস উল্লেখ করব।

হাদীস নং :

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ قَالَ وَعَدَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي فَإِنْ أُقْتَلْ كُنْتُ مِنْ أَفْضَلِ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ أَرْجِعْ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ

বাংলা অনুবাদঃ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদের থেকে হিন্দুস্থানের মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সম্পদ ব্যয় করে ফেলবো। যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠতর শহীদের অন্তর্ভুক্ত হবো। আর যদি আমি ফিরে আসি, তাহলে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাবো। (সুনানে নাসায়ী, খন্ড-৬, পৃ: ৪২)

হাদীস নং :

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عُثْمَانَ بْنِ سَعِيدٍ الْحِمْصِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو الْمُغِيرَةِ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَالِمٍ، حَدَّثَنِي الْعَلَاءُ بْنُ عُتْبَةَ، عَنْ عُمَيْرِ بْنِ هَانِئٍ الْعَنْسِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: كُنَّا قُعُودًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ، فَذَكَرَ الْفِتَنَ فَأَكْثَرَ فِي ذِكْرِهَا حَتَّى ذَكَرَ فِتْنَةَ الْأَحْلَاسِ، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا فِتْنَةُ الْأَحْلَاسِ؟ قَالَ: هِيَ هَرَبٌ وَحَرْبٌ، ثُمَّ فِتْنَةُ السَّرَّاءِ، دَخَنُهَا مِنْ تَحْتِ قَدَمَيْ رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يَزْعُمُ أَنَّهُ مِنِّي، وَلَيْسَ مِنِّي، وَإِنَّمَا أَوْلِيَائِي الْمُتَّقُونَ، ثُمَّ يَصْطَلِحُ النَّاسُ عَلَى رَجُلٍ كَوَرِكٍ عَلَى ضِلَعٍ، ثُمَّ فِتْنَةُ الدُّهَيْمَاءِ، لَا تَدَعُ أَحَدًا مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ إِلَّا لَطَمَتْهُ لَطْمَةً، فَإِذَا قِيلَ: انْقَضَتْ، تَمَادَتْ يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيهَا مُؤْمِنًا، وَيُمْسِي كَافِرًا، حَتَّى يَصِيرَ النَّاسُ إِلَى فُسْطَاطَيْنِ، فُسْطَاطِ إِيمَانٍ لَا نِفَاقَ فِيهِ، وَفُسْطَاطِ نِفَاقٍ لَا إِيمَانَ فِيهِ، فَإِذَا كَانَ ذَاكُمْ فَانْتَظِرُوا الدَّجَّالَ، مِنْ يَوْمِهِ، أَوْ مِنْ غَدِهِ

বাংলা অনুবাদঃ

হযরত ইয়াহিইয়া ইবনে ওসমান (রঃ) আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন- একদিন আমরা রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে বসে ছিলাম। এসময় তিনি ফেতনা সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন। এমনকি তিনি ইহলাসের ফিতনার কথাও উল্লেখ করেন। এসময় জনৈক লোক জিজ্ঞেস করে- “হে আল্লাহর রসূল (সাঃ) ইহলাসের ফেতনাটি কিরূপ?” তিনি বলেন, “তা হলো পলায়ন ও ধ্বংস”। তারপর তিনি সারা ফিতনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “তা এমন এক ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হবে যাকে মানুষেরা আমার বংশের লোক বলে মনে করবে; কিন্তু আসলে সে আমার বংশের লোক হবে না, কেননা আমার বন্ধু বান্ধব তো মুত্তাকী লোকেরাই। তারপর লোকেরা এমন এক ব্যক্তির নেতৃত্বের উপর একমত হবে, যে দূর্বলচিত্ত ও লেংড়া হবে। তার শাসনকাল দীর্ঘ হবে না। অতঃপর চরম ফিতনা প্রকাশ পাবে,  যা এ উম্মতের কাউকে এক চড় না দিয়ে ছাড়বে না। তারপর লোকেরা যখন বলাবলি করতে থাকবে যে, ফিতনার সময় শেষ হয়ে গেছে, তখন তা আরো বৃদ্ধি পাবে। তখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যে, সকালে যে মুমিন থাকবে সে সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে। তখন লোকেরা বিভিন্ন দূর্গে আশ্রয় নিবে। আর মুসলমানরা যে দূর্গে অবস্থান করবে, সেখানে কোন মুনাফিক থাকবে না এবং যেখানে মুশরিক থাকবে, সেখানে কোন মুমিন লোক থাকবে না। তোমরা যখন এ অবস্থায় পৌঁছাবে, তখন দাজ্জাল বের হওয়ার অপেক্ষা করবে ঐ দিন থেকেই বা পরের দিন। (সুনান আবু দাউদ, ৪১৯৭)

হাদীস নং :

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ؓ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَخْرُجُ أَمِيرٌ فِي آخِرِ الزَّمَانِ مِنْ مُلْكِ الْمَشْرِقِ مِنَ الْهِنْدِ قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ الْمَهْدِيُّ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْقَرْيَةِ يُقَالُ النَّضَجُ مِنْ بَلَدٍ مُسَمَّى الْعُسْرَى ، اسْمُهُ مَحْمُودٌ وَاسْمُ أَبِيهِ قَدِيرٌ وَاسْمُ أُمِّهِ سَهْرَاءُ وَيُفْتَحُ الْهِنْدُ بِيَدِهِ

বাংলা অনুবাদঃ হযরত হুযাইফা বিন ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, শেষ জামানায় মাহদির পূর্বে হিন্দুস্থানের পূর্বদেশ হতে একজন আমীরের (নেতা) প্রকাশ হবে এবং দূর্গম নামক অঞ্চলের, পাকা নামের জনপদের অধিবাসী হবে। তার নাম হবে মাহমুদ ও তার পিতার নাম কাদের ও তার মাতার নাম সাহারাহ হবে এবং তার হাতে হিন্দুস্থানের বিজয় হবে। (আখীরুজ্জামান আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ)

হাদীস নং :

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ؓ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ الْمَهْدِيُّ مِنْ اَهْلِ بَيْتِي بِنْتِي فَاطِمَةَ وَلَكِنْ يَخْرُجُ قَبْلَهُ أَمِيرٌ اسْمُهُ مَحْمُودُ بْنُ عَبْدِ الْقَدِيرِ ، يَأْتِي مِنْ بَلَدِ مَشْرِقِ الْهِنْدِ

বাংলা অনুবাদঃ হুযাইফাহ বিন ইয়ামান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার বংশধর (পরিবারস্থ) আমার কন্যা ফাতিমা থেকে খলিফা মাহদীর অবির্ভাব হবে। তবে তার পূর্বে একজন আমীরের প্রকাশ ঘটবে যার নাম হবে মাহমুদ বিন আব্দুল কাদির। সে হিন্দুস্থানের পূর্বাঞ্চল থেকে আসবে। (ফিতনাতুদ দুনিয়া, আবু নাইম আল ইস্ফাহানী, পৃষ্ঠা ১৩১, হাঃ ১১৮; কিতাবুল আকিব ২৩৮)

শারীরিক অসুস্থতাঃ

ছোটবেলা মাহমুদ জন্মগত “মায়োপ্যাথি” রোগে আক্রান্ত। রোগের কারনে মাহমুদের হাতের বাহু, উরুর মাংসপেশি শুকিয়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিক মানুষের মত হাঁটা-চলা, কাজকর্ম করতে পারে না। শারীরিকভাবে খুবই দূর্বল। মাহমুদের মা সাহারা জানালো, “আগে তবুও কষ্ট করে একা একা চলা ফেরা করতে পারত। কিন্তু দ্বিতীয় বার জেল থেকে বের হওয়ার পর থেকে আর একা একা হাঁটা-চলা করতে পারে না। এমনকি একা একা উঠতে-বসতেও পারে না! সবসময় একজন মানুষের প্রয়োজন হয় উঠা-বসা করাতে।

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাঃ

দ্বিতীয়বার জেল থেকে বের হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে “তালিমূল ইসলাম একাডেমী” নামক একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে মাহমুদ। মাদ্রাসার অবস্থান ছিল পাবনার আতাকুলার গঙ্গারামপুরে।

হেদায়েতের আলোয় অমুসলিমরাঃ

মাহমুদের অনুসারীদের থেকে জানা যায়, মাহমুদ যেমন মুসলিমদের মাঝে বর্তমান সময়ের জন্য আল্লাহ তা’আলা প্রেরিত দ্বীন ইসলামের একজন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক হয়ে দাওয়াতি কাজ করছে। তেমনি অমুসলিমদের মাঝেও দ্বীন ইসলাম পৌঁছে দিতে দাওয়াতি কাজ করেছে। মাহমুদের দাওয়াতি কাজে অনেক অমুসলিমরাও হেদায়েতের আলোতে এসেছে। তার মধ্যে উল্লেখ্যঃ

  • ১) টাঙ্গাইলের বিষ্ণু, পিতা মিহিলাল; ইসলাম গ্রহনের পর বিষ্ণু থেকে রমজান আলী।
  • ২) সিরাজগঞ্জের পলাশ, পিতা বানছি; পলাশ থেকে আব্দুল্লাহ।
  • ৩) গাজীপুরের গোবিন্দ, পিতা মোহন; গোবিন্দ থেকে আহমেদ আলী।
  • ৪) রাজশাহীর নারায়ন, পিতা মহাদেব; নারায়ন থেকে ওসমান।
  • ৫) রাজশাহীর গৌতম বড়ুয়া, পিতা ঊর্মি বড়ুয়া; গৌতম বড়ুয়া থেকে ফারুক।

গ্রেফতার জেলজীবনঃ

ইলহাম আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার মাহমুদকে গ্রেফতার করে সন্ত্রাস বিরোধী (জঙ্গি মামলা) দিয়ে আটক করে জেলে পাঠায় প্রশাসন।

প্রথমবারঃ

২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, ঢাকার আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার হয় মাহমুদ। সাথে ছিল আরো দুইজন অনুসারী। অভিযোগ ছিল ১০ই মহররম উপলক্ষে শিয়াদের তাযিয়া মিছিলে বাধাদানের পরিকল্পনা।

তবে মূল অভিযোগঃ হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী জিহাদ করতে চাওয়া। ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট জামিনে বের হয় মাহমুদ।

দ্বিতীয়বারঃ

আবারো ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজশাহী থেকে গ্রেফতার হয় মাহমুদ। একই সাথে গ্রেফতার হয় আরো ৯ জন অনুসারী। এই খবর ২০ নভেম্বর এর যুগান্তর পত্রিকায় এসেছিলো “গ্রেফতার করা হয় জে এম.বি এর উত্তর বঙ্গের প্রধান আসামি হিসাবে”। তবে মূল অভিযোগ আগের গুলোই।

তৃতীয়বারঃ

২০২৩ সালের ১৪ই আগস্ট মৌলভিবাজারের কর্মধা ইউনিয়ন অফিস থেকে ৩য় বারের মত গ্রেফতার করা হয় মাহমুদকে। মাহমুদ সহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ ছিল হিজরত করে কালা পাহাড়ে অনুসারীদের নিয়ে আস্তানা গড়ে তোলা। এই অভিযোগে মামলা হয় দুটি। একটি মিরপুর মডেল থানায়, দ্বিতীয়টি দারুস সালাম থানায়। দুই মামলায় মোট প্রায় ৫৫ জন অনুসারী গ্রেফতার হয়। এখন পর্যন্ত সর্বচেয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয় এই গ্রেফতার। যা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও আলোড়ন তুলে।

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *