দাওয়াহ
আর্টিকেল সমগ্র ও ফাতওয়া
অন্যান্য
সাম্প্রতিক কমেন্টগুলি
কে এই ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ? কি তাঁর পরিচয়?
হাদিসে এসেছে
আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার জানামতে রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্ এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীতে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীনের ‘তাজ্দীদ’ বা সংস্কার সাধন করবেন।
- (সহীহ, সূনান আবূ দাউদ (ইঃ ফাঃ) ৪২৪১ [আলবানী একাঃ ৪২৯১]; হাকেম ৮৫৯২; মিশকাতুল মাসাবিহ ২৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭০, ইবনে দাইলামী)
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, শেষ জামানায় পথভ্রষ্ট আলেম বৃদ্ধি পাবে। আর তাঁরা দ্বীনকে মৃত্যুর অবস্থায় নিয়ে যাবে। ঠিক তখন আল্লাহ তা’আলা হযরত উমর (রা:) এর বংশ থেকে একজন বালককে পাঠাবেন। যার মাধ্যমে দ্বীন জীবিত (সংস্কারসাধন) হবে।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৬)
হজরত হুযাইফা বিন ইয়ামান রা: থেকে বর্ণিত, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, শেষ জামানায় মাহদির পূর্বে, হিন্দের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন আমীর বের হবে এবং সে দুর্গম এলাকার, পাকা নামের অঞ্চলের অধিবাসী হবে। তার নাম মাহমুদ, তার পিতার নাম কদির ও তার মাতার নাম সাহারা হবে এবং তার হাতে হিন্দুস্তানের বিজয় হবে।
- (আখীরুজ্জামান আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ)
হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূল ﷺ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের মুসলমানদের উপর ইহুদী-নাসারাগণ অত্যাচার বৃদ্ধি করে দিবে। তখন কেবল খোরাসানীরাই তাদের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকবে। এরূপ হিন্দুস্তানের মুশরিকরাও মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করে দেবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখন্ডের দূর্গম নামক একটি অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালক বা যুবকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম আব্দীল (নামে আব্দিল বা আব্দুল থাকবে)। সে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে হিন্দুস্তান বিজয় করবে।
- (আখীরুজ্জামান আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩২)
হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলমিদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম আব্দুল ক্বদীর। সে দেখতে খুবই দুর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বিজয় দান করবেন।
- (আখীরুজ্জামান আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)
হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম আব্দুল ক্বদির। সে দেখতে খুবই দুর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বিজয় দান করবেন।
- (আখীরুজ্জামান আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩০; ক্বাশ্ফুল কুফা ২৬১)
আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের উপরে খুবই অত্যাচার করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল হতে একটি মুসলিম জামাতের প্রকাশ ঘটবে। যাদের পরিচালনা করবে একজন দুর্বল বালক। যার নাম হবে মাহমুদ, উপাধি নাম হবে হাবীবুল্লাহ। তিনি হিন্দুস্তান বিজয়ের পর কাবার দিকে ধাবিত হবে। আমি (আবু হুরায়রা) জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহর রসূলﷺ, সে কাবার দিকে ধাবিত হবে কেন? সেই সময় কি বাইতুল্লাহ ইহুদী-খ্রিষ্টানদের দখলে থাকবে?” তিনি বলেন, না। বরং সে আল্লাহর খলীফা মাহদীর হাতে বাইয়াত নিতে আসবে।
- (আখীরুজ্জামান আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩১; কিতাবুল আক্বিব ১২৫৬; ক্বাশ্ফুল কুফা ৭৩২; আল আরিফুল ফিল ফিতান ১৭০৩)
ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এর জীবনী
আরবী ১৪১৬ হিজরীর জুমাদিউল আওয়াল মাসের ৬ তারিখ (ঈসায়ী ১৯৯৫ সালের ১লা অক্টোবর) রোজ রবিবার সকালে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের অন্তর্গত উত্তর গাঁওপাড়া গ্রামের একটি অতি সাধারণ নিন্মবিত্ত একটি পরিবারে জন্ম হয় মাহমুদের। ডাকনাম জুয়েল মাহমুদ, তাঁর স্বজনদের অনেকে তাকে সোহেল নামেও ডাকে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের অনেক অঞ্চলের মানুষই তাকে “হাবীবুল্লাহ মাহমুদ” নামে চিনে। এছাড়াও তাঁর আরেকটি পরিচয়- ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ। চলুন শুরু থেকেই শুরু করা যাক!
নাম মাহমুদ। পিতা আব্দুল ক্বদীর বিন আবুল হোসেন এবং জননী সাহারা বিনতে রিয়াজ উদ্দিন।
দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। ছোটবেলা থেকেই অতি সাধারণভাবে জীবনযাপন করেন যেভাবে একটি সাধারণ পরিবারে একটি কিশোর বেড়ে উঠে। তাঁরও শিক্ষার্জনের বয়স শুরু হয় এবং শিক্ষার্জন হিসেবে স্থানীয় সালিমপুর মালিগাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া-লেখা করেন। অতঃপর তাঁর নানার সহযোগীতায় স্থানীয় গাঁওপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে কুরআনের নাজরানা শেষ করে তিনি কিছু অংশ মুখস্থও করেন। অতঃপর বাঘা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে সেখান থেকে তিনি ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এটাই তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা। ছোটবেলা থেকে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও একটি সময় তাঁর শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। অসুস্থতাটি এমন ছিল যে তিনি ধীরে ধীরে তাঁর পায়ে ভর দেওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন। কিশোর বয়সে তিনি সাইকেলও চালিয়েছেন কিন্তু এই শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এক সময় নিজের একাকি চলাচল করাই কষ্টকর হয়ে পরে, দিন দিন সমস্যাটি আরো বৃদ্ধিই পেতে থাকে এবং বর্তমানে সাহায্য ছাড়া খুবই কম চলতে পারে। তাঁর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে খোঁজখবর নিলে দেখা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি ইসলামের দিকে ধাবিত হওয়া এক ব্যক্তি। শারীরিক সমস্যা থাকার দরুনও তিনি কিশোর বয়স থেকে যুবক বয়সেও মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারতেন। নিজস্ব ভালো-মন্দ বোঝার মত জ্ঞান হওয়ার বয়স থেকেই তিনি ইসলামের জন্য নিবেদিত হন। প্রাথমিক কর্মজীবনে তিনি ইমামতি ও কুরআন শিক্ষার মত কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তিনি ইসলামের বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করতেন আর তাই তিনি ইসলামের তথা দ্বীনের বৃহৎ উপকার স্বার্থে মুসলিমদের বড় জামআতের সাথে থাকতে চাওয়ার সুবাদে জামাতুল ইসলাম সংগঠনের ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে গঠিত অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরে যোগ দেন। এবং তাঁর জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তায় ছাত্রশিবির সংগঠনে তাঁর এলাকার আঞ্চলিক নেতৃত্ব পর্যায়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এই সংগঠনের মাধ্যমে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মনেপ্রাণে কাজ করে যান। যদিও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি কিন্তু সেই সময়ের মাঝেও রয়েছে অনেক ঘটনা; যেসকল বিষয় দিয়ে আজ তাঁর বিরুদ্ধে ভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালায় বাংলাদেশী টিভি মিডিয়াগুলো। সংগঠনে থাকা কালীন তাঁর এলাকায় তখন রাজনৈতিকভাবে শিবিরের প্রভাব ও দাপটই ছিল অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে বেশি এবং তিনিও সেই প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে একজন দায়িত্বশীল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যার দরুন বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিহিংসার কারণে ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়। তাকে (মাহমুদকে) নারী কেলেঙ্কারি বিষয়ে চক্রান্ত করে প্রশাসনের মাধ্যমে আটক করিয়ে জেল খাটায়। সম্প্রতি যমুনা টিভি নিউজেও এই বিষয়ে অপপ্রচারটি দেখা যায় তাই এখানে সত্য ঘটনাটি সম্পূর্ণ সামনে আনছি।
সাল ২০১৩ এর দিকে, মাহমুদ এর নিজ এলাকার আওতাধীনের আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের সেক্রেটারী ও ওয়ার্ড মেম্বার “আলাম” উনি কথা ছড়িয়েছিল যে- মাহমুদকে রাজনীতির মাঠ থেকে বোল্ড আউট করবে। এর প্রায় দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৫ সালে সে সহ “জুনাব মাস্টার” ওয়ার্ড সভাপতি আওয়ামীলীগ, পাকা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বাঙ্গার ছোট ভাই “রুবেল হোসেন”, তমালতলা নুরপুর ইউনিয়নের মেম্বার “আব্দুল হাকিম” (বর্তমানে এখন হয়তো চেয়ারমান) জোট করে এবং প্রশাসনের সাথে চুক্তি করে। এরপর একদিন, মাহমুদ এর নিজের তৈরী একটা মাদ্রাসা ছিলো রামপাড়ায়; মাদ্রাসার নাম ছিল দায়ী ইলাল্লাহ হাফেজীয়া মাদ্রাসা; তার পাশ থেকে কিছু লোক সিভিল ড্রেসে তুলে নিয়ে যায় তাকে; নিয়ে যাওয়ার পর সরাসরি থানাতেই রাখে। এর মধ্যে ঘটনা সাজায় পুলিশ। আর তাদের সেটি করতে চাপ সৃষ্টি করছিল সেই ৪ জন ব্যক্তি। সেদিনই তাঁকে আবার থানা থেকে নিয়ে তমালতলা বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন তাঁর আসে পাশে অসংখ্য সাধারণ লোক ছিল যার মধ্যে প্রশাসন পুলিশও ছড়িয়ে গিয়েছিল। সেদিনই প্রশাসন মিথ্যা সিন তৈরি করে, বাজারে নাটক তৈরি করে। সেই বাজার থেকে আবারো তুলে নিয়ে চলে যায় তাঁরাই, যারা একটু আগেই বাজারে ছেড়ে দিয়েছিল। তখনকার বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সেই ৪ জনের কাছ থেকে পরামর্শ চায়- ‘একে কি মামলা দেওয়া দেওয়া যায়?’ তাঁরা বলে- ‘এমন মামলা দেওয়া যায় যাতে আর জীবনে রাজনীতিই করতে না পারে’। এর আগে বা পরে তাঁর সাথে কোন ঘটনাই ঘটে নি। সব হয়েছে থানাতে বসেই। তখন তাঁরা নারী কেলেঙ্কারি বিষয়ক মামলা দেয় যাতে তাঁর সবচেয়ে বেশি সম্মানহানী হয় এবং আর যেন জামায়াত শিবিরের সেই ইসলামী রাজনীতিতে ফিরে আসতে না পারে।
এরকম ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের পরও তাঁর দৃঢ় মনোবল ও দৃঢ় সংকল্পের কারণে কোন কিছুই দ্বীনের জন্য কাজ করতে বাধা হয়ে দাড়ায় নি। একটা সময় তিনি জামাতে ইসলামীর বিভিন্ন বিষয়কে ইসলামের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক হিসেবে উপলব্ধি করেন। এবং তখন থেকে এই দলের সাথে তাঁর কার্যক্রম অনেকটা কমিয়ে দেন। এই বিষয়টি উপলব্ধি করা এবং কার্যক্রম কমিয়ে দিতে অন্যকেউ প্রভাব ফেলেনি আল্লাহ ছাড়া। একটা সময় তিনি সম্পূর্ণভাবেই সেই সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ান। এভাবে অনেকটা সময় চলে যায়।
সন ২০১৭। যে সময় তিনি বেলায়েত পান এবং তাঁর ব্যাপারে জানতে পারেন সাথে তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে। তিনি সেই পথেই পথিক হওয়ার জন্য দাওয়াহ এর কাজ করতে থাকেন রাজশাহীতে অবস্থান করে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁর দাওয়াহতে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন তাঁর কাছে ভিড় জমাতে থাকেন। এভাবেই তাঁর অসংখ্য অনুসারী ও সহযোগী হয়ে উঠে।
এই দাওয়াহ চলতে থাকে যতক্ষণ না তিনি ২০১৯ সালে প্রশাসন বাহিনী (এন্টি টেরোরিজম ইউনিট) এর কাছে মিথ্যা মামলায় আটক হন যাতে তাকে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হিসেবে সারা দেশের সামনে উপস্থাপন করানো হয়। যদিও এই দলের সাথে তাঁর কোনই সম্পর্ক ছিল না; কারণ তাঁর দাওয়াহ ছিল সম্পূর্ণই ভিন্ন। তার সাথে তাঁকে বিভিন্ন ধরণের নাশকতার ও হামলার পরিকল্পনার অপবাদও দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্দোষ।
দীর্ঘ এক বছর বন্দী অবস্থায় কাশিমপুর কারাগারে থেকে এরপর তিনি ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে জামিনে মুক্তি পান এবং তাঁর নিজ বিভাগ রাজশাহীতেই অবস্থান করে সাধারণ জীবনযাপন করা শুরু করেন ও তাঁর দাওয়াহ প্রচার করতে থাকেন। তিনি সেখানে সমাজের বেকার যুবকদের নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাড় করান, যা দিয়ে অনেকেরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তৈরি হয়। তাঁর দাওয়াহ গ্রহণকারী অনেক যুবকও সেখানে তাঁর সাথে ব্যবসায় যুক্ত হয় যা করোনা কালীন সময়ে তাদের বেকারত্ব ও আর্থিক সংকটকে অনেকটাই ঘুচিয়ে দিচ্ছিল। তাঁর দাওয়াহ এর প্রচারে তখন আবারো দেশের ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাঁর সাথে যোগাযোগ করে, দেখা-সাক্ষাৎ করে, দাওয়াহকে কবুল করে। এই দাওয়াহ তখন দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে যায়। তখনও তিনি কোন ধরণের সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সংগঠন (যাকে জঙ্গি সংগঠনও বলা হয়) তাঁর সাথে সংযুক্ত ছিলেন না। তাঁর দাওয়াহ এর বিষয়গুলোই ছিল অন্যান্য সংগঠন থেকে ভিন্ন। উল্টো দেখা যেত অন্যান্য সংগঠনের সদস্যরাই তাঁর কাছে ভিড় জমাত ও তাঁর দাওয়াহকে কবুল করতো। কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি, সেখানে তাঁর এই দাওয়াহ আবারো বাধাপ্রাপ্ত হয়। এভাবে যখন অসংখ্য লোক তাঁর দাওয়াহকে কবুল করে তখন সেটিও ইসলামের শত্রুদের নজরে পড়ে। আবারো অন্য একটি সরকারী প্রশাসন বাহিনী (র্যাব) তাকে ২০২০ সালেরই নভেম্বর মাসে আটক করে এবং দেশের সামনে তৈরি করে আগে থেকে সাজানো পরিকল্পনা করা এক বিশাল ঘটনা। সেই ঘটনার পরিকল্পনাও করে প্রশাসন বাহিনী র্যাব যার ব্যাপারে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও কিছুই জানতো না। এই ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হওয়া সাজানো নাটকের আসল চরিত্র তুলে ধরেছেন আবু উমার নামের একজন লোক এবং তিনি সেটি লিখিত বই আকারে প্রকাশ করেন যার নাম দিয়েছেন- “কী হয়েছিল সেইদিন?”। বইটি যারা পড়েছেন তারাই জানেন যে তাদের সেই বানানো-সাজানো নাটক কতটা ভয়ানক ছিল! দেশের সামনে তাঁকে সেদিন পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি এর রাজশাহীর আঞ্চলিক আমীর হিসেবে; যেই সংগঠনের সাথে তাঁর কোন সম্পর্কই ছিল না কখনো! তাঁর কিছু অনুসারীদের দিয়ে একই সাথে সিরাজগঞ্জে করা হয় একটি জঙ্গি ধরার নাটক, যাদেরকে আগের রাত থেকেই আটক করে রাখা ছিল নাটক তৈরির জন্য। এভাবেই তাঁরা নিরস্ত্র লোকদের নাটকের মাধ্যমে সশস্ত্র লোক বানিয়ে, পরিচয় করিয়ে দেশের মানুষকে ধোঁকা দেয় ও উপর মহলে তাদের কাজের মিথ্যা পারদর্শিতা দেখায়। এই ঘটনার পর তিনি অর্থাৎ মাহমুদ রাজশাহী জেলে দীর্ঘদিন কাটায়।
তিনি বাহিরে থাকুক বা বন্দীশালায় সব সময়ই সমাজ ও রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করতেন। জেলখানায় যাদেরকে অন্যায় ভাবে আটক করা হয়েছে, ইসলামের জন্য দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখা হয়েছে, তিনি তাদের পরিবারে খোঁজ নেওয়া, আর্থিক সাহায্য করা থেকে শুরু করে তাদের মামলা পরিচালনার কাজ থেকে শুরু করে তাদের দৈনন্দিন যাবতীয় কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তাদের বস্ত্র দেওয়া ও খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতেন। যাদের মামলা চালানোর জন্য অর্থ দরকার ছিল, তাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করে মুক্তির ব্যবস্থা করতেন। যাদের মামলা পরিচালনার কেউ ছিল না, তাদের টা তিনি দেখাশুনা করতেন। এভাবেই তিনি অনেককে মুক্ত করান এবং তিনি সেই সকল লোকদের কোন সময়ই দল-মাজহাব দেখে আলাদা করেন নি। তাদের সকলকেই বন্দী হিসেবে, মুসলিম হিসেবে দেখেছেন। যাদের মধ্যে প্রকৃতই সমস্যা ছিল, তাদেরকে তিনি এটি ভেবেই সাহায্য করেছেন এই আশায় যে, একটি সময় আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁরা সঠিক-বেঠিক ঠিক চিনতে পারবে। তিনি ঢাকা কারাগারে থাকা অবস্থাতেও এভাবেই অন্যান্য বন্দীদের, এমনকি তাঁর দাওয়াহ এর ঘোর বিরোধীকেও সাহায্য করেছেন। যার কারণে অনেকেই আজ মুক্ত বাতাসে।
এভাবে অনেকটা সময় কেটে যায় রাজশাহী কারাগারে। দ্বিতীয় বার দীর্ঘ ২ বছর সময়কাল ধরে জেলবন্দী থাকার পরে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এত বছর জালিমদের হাতে বন্দী থাকার পরেও ইসলামের পথে তিনি অটল-অবিচল থেকে তাঁর দাওয়াহ কে প্রচার করতে ভুলেন নি। তিনি ইসলামকে এই দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন ভুলেন নি।
তিনি যখন দেখেন যে রাষ্ট্রীয় ভাবে শিক্ষাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে দেশব্যাপী, তখন তিনি নিজেই একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম রাখেন তা’লিমুল ইসলাম একাডেমী। এতে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সাথে সাধারণ দুনিয়াবী জ্ঞান শিক্ষা করার ব্যবস্থাও রাখেন। তিনি যখন দেখেন যে জেনারেল শিক্ষার বইতে বিভিন্ন নাস্তিক্যবাদী, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ঢুকানোর ষড়যন্ত্র মাদ্রাসা শিক্ষার বোর্ড ও প্রকাশনীতেও শিকড় বিস্তার করছে তখন তিনি নিজেই শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বড় পদক্ষেপ নেন। তা এই যে- তিনি নিজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বই তৈরি করে একটি বোর্ডই তৈরি করবেন। সেই পরিকল্পনা নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বই লেখা ও ছাপা শুরু করেন এবং তাঁর মাদ্রাসাতে সেই শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেন। অন্যান্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সেগুলো নিজেদের জন্য ব্যবহারে অনেক আগ্রহী হয়।
তাঁর দাওয়াহ্ও চলতে থাকে এবং অসংখ্য লোক তাঁর দাওয়াহ কে কবুল করে। দ্বীন কায়েমের অনেক সহযোগী তৈরি হয় সারা দেশ থেকে। তাঁর কর্মকান্ডগুলো শয়তানদের বরই কষ্ট দিত। তাঁর এই দাওয়াহ কে বন্ধ করতে জালিমরা গোয়েন্দা লাগিয়ে রাখতো সব সময় যে মাহমুদ কি করে, কোথায় যায়, কার সাথে যোগাযোগ করে ইত্যাদি। যদিও তিনি দেশ বিরোধী কোন কার্যক্রম, কোন হামলা কিংবা রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কোন ক্ষতি করেন নি। তাঁর প্রতিষ্ঠা করা মাদ্রাসায়ও প্রায়ই গোয়েন্দা লোকজনের যাতায়াত ও জিজ্ঞাসাবাদ চলতো। এভাবে যখন আর পারছিল না তখন তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে অন্যত্র সরে পড়েন। কিন্তু সেখানেও জালিম বাহিনীরা এক সময় ফাদ পেতে, নাটক সাজিয়ে আবারো আটক করেন মাহমুদ কে। সাথে তাঁর অনেক সহযোগী ও তাদের পরিবারের লোকজন। এটি ঘটে ২০২২ সাল থেকে প্রায় ১ বছর পর ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে, এই মধ্য ১ বছর সময়ে তিনি জামিনে বাহিরে ছিলেন। বর্তমানে (২০২৪ সালের জুন মাস) আবারো তিনি ও তার বেশির ভাগ সহযোগী কারাবন্দী জামিনে মুক্ত আছেন এবং তার সেই দাওয়াহ এর উপর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি তাঁর এই রাষ্ট্র-সমাজ সংস্কার কাজ ও তাঁর দাওয়াহ কে প্রচার করতে যেয়ে এ নিয়ে ৩ বার কারাবন্দী হন। তিনি মানুষকে যে ভয়াবহ ভবিষ্যতের বিষয়ে অবগত করিয়েছেন অনেক পূর্ব থেকে তা আমরা এখন নিজ চোখেই দেখতে পাচ্ছি। জালিমের জুলুমের চূড়ান্ত সীমা লঙ্ঘন হয়েছে এবং এর কারণে অবশ্যই বড় ধরণের আযাব আসতে চলেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এ সকল সতর্কবার্তারই সতর্ককারী হিসেবে তাঁর এই দাওয়াহ চলছে ২০১৭ সাল থেকে।