বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম
যারা গুরুত্বপূর্ণ ১ম পর্বটি পড়েন নি। তাঁরা আগে সেটি পড়ুন- https://www.gazwatulhind.site/posts/688/
এবার আসি কুরআন-হাদিসে কি বলা আছে নেতা হওয়ার শর্ত হিসেবেঃ
وَ جَعَلۡنَا مِنۡهُمۡ اَئِمَّۃً یَّهۡدُوۡنَ بِاَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُوۡا ۟ؕ وَ کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یُوۡقِنُوۡنَ ﴿۲۴﴾
তাঁরা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করতো। তাঁরা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল। (সূরা আস-সাজদাহ, আঃ ২৪)
তাফসীরে জাকারিয়াঃ
——————-
অর্থাৎ আমি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মাঝে কিছু লোককে নেতা ও অগ্রপথিক নিযুক্ত করেছিলাম। যারা তাঁদের পয়গম্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মহান প্রভুর নির্দেশানুসারে লোকদেরকে হেদায়াত করতেন। [দেখুন: মুয়াস্সার]
তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআনঃ
—————————-
আয়াত মতে কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের পরিচালক ও নেতা হওয়ার দু’টি শর্তঃ
অর্থাৎ, আমি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মাঝে কিছু লোককে নেতা ও অগ্রপথিক নিযুক্ত করেছিলাম যারা তাঁদের পয়গম্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মহান প্রভুর নির্দেশানুসারে লোকদেরকে হেদায়েত করতেন—যখন তাঁরা ধৈর্য্যধারণ করতেন এবং আমার বাণীসমূহের উপর স্থির বিশ্বাস স্থাপন করতেন।
ইসরাঈল বংশের ওলামাগণের মধ্য হতে কতককে যে, জাতির নেতা ও পুরোধার মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে, তার দু’টি কারণ রয়েছে। এ আয়াতে সে দু’টি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে— (১) ধৈর্যধারণ করা, (২) আল্লাহর আয়াতসমূহের উপর অটুট বিশ্বাস স্থাপন করা। আরবী ভাষায় সবর করার অর্থ অত্যস্ত বিস্তৃত ও ব্যাপক। এর শাব্দিক অর্থ অনড় ও দৃঢ়বদ্ধ থাকা। এখানে সবর দ্বারা আল্লাহ্ পাকের আদেশসমূহ পালনে অটল ও দৃঢ়পদ থাকা এবং আল্লাহ্ পাক যেসব বস্তু বা কাজ হারাম ও গর্হিত বলে নির্দেশ করেছেন সেগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখা। শরীয়তের যাবতীয় নির্দেশাবলীই এর অন্তর্গত—যা এক বিরাট কর্মগত দক্ষতা ও সাফল্য। এর দ্বিতীয় কারণ আল্লাহ পাকের আয়াতসমূহের উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন, আয়াতসমূহের মর্ম অনুধাবণ করা এবং অনুধাবণান্তে তার উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা— উভয়ই এর অন্তর্গত। এটা এক বিরাট জ্ঞানগত দক্ষতা ও সাফল্য।
সারকথা : আল্লাহ্ পাকের নিকটে নেতৃত্ব ও পৌরোহিত্যের যোগ্য কেবল সেসব লোকই যারা কর্ম ও জ্ঞান উভয়দিকে পূর্ণতা লাভ করেছে। এখানে কর্মগত পূর্ণতা ও দক্ষতাকে জ্ঞানগত পূর্ণতা ও দক্ষতার পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে, অথচ জ্ঞানের স্থান স্বভাবতঃ কর্মের পূর্বে। এতে ইংগীত করা হয়েছে যে, আল্লাহর নিকটে কর্মহীন শিক্ষা ও জ্ঞানের কোন মূল্য নেই।
ইবনে কাসীর এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে কিছুসংখ্যক ওলামার মন্তব্য উদ্ধৃত করেন; তা এই – ধৈর্য ও দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমেই দ্বীনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের মর্যাদা লাভ করা যায়।
তাফসীর ইবনে কাছীরঃ
———————
এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ তাদের মধ্যে যারা আমার হুকুম পালন করেছিল, আমার নিষেধকৃত কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়েছিল, আমার কথার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল, আমার রাসূলদের অনুসরণে ধৈর্য সহকারে দৃঢ় থেকেছিল, তাদেরকে আমি নেতা মনোনীত করেছিলাম। তারা আমার আহকাম জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দিতো এবং মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করতো এবং মন্দ কাজ হতে বিরত রাখতো। কিন্তু তারা যখন আল্লাহর কালামে পরিবর্তন-পরিবর্ধন শুরু করে দিলো তখন আমি তাদের এ পদ-মর্যাদা ছিনিয়ে নিলাম ও তাদের অন্তর শক্ত করে দিলাম। ভাল আমল ও সঠিক বিশ্বাস তাদের থেকে দূর হয়ে গেল। পূর্বে তারা দুনিয়ার লোভ-লালসা হতে বেঁচে থাকতো।
সুফিয়ান (রঃ) বলেনঃ ‘এ লোকগুলো এরূপই ছিল। মানুষের জন্যে এটা উচিত নয় যে, তারা এমন নেতার অনুসরণ করবে যে দুনিয়ার লোভ-লালসা হতে বেঁচে থাকে না। তিনি আরো বলেনঃ “দ্বীনের জন্যে ইলম অপরিহার্য যেমন দেহের জন্যে খাদ্য অপরিহার্য।
হযরত আলী (রাঃ)-এর উক্তি রয়েছেঃ “ঈমানের মধ্যে সবর বা ধৈর্যের স্থান এমন যেমন দেহের মধ্যে মাথার স্থান। তুমি কি আল্লাহ পাকের এ উক্তি শুননি? তিনি বলেন- আমি তাদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ-প্রদর্শন করতো, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল তখন তারা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী।” হযরত সুফিয়ান (রঃ)-কে হযরত আলী (রাঃ)-এর উপরোক্ত উক্তির তাৎপর্য জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “এর ভাবার্থ হচ্ছে- যেহেতু তারা সমস্ত কাজের মূলকে গ্রহণ করেছে সেহেতু আল্লাহ তাদেরকে নেতা বানিয়ে দিয়েছেন। কোন কোন আলেম বলেছেন যে, ধৈর্য ও বিশ্বাস দ্বারা দ্বীনের নেতৃত্ব লাভ করা যায়। এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “অবশ্যই আমি বানী ইসরাঈলকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করেছি এবং তাদেরকে উৎকৃষ্ট ও পবিত্র খাবার খেতে দিয়েছি, আর তাদেরকে সারা দুনিয়ার উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছি।” (৪৫:১৬)
———————————————-
তাফসীর থেকেই স্পষ্টভাবে সব কিছু বুঝা যায়। অত্র আয়াত দিয়ে আল্লাহ তায়ালা কাউকে নেতা হওয়ার বা মনোনীত করার যে শর্ত দিয়েছে তাঁর সংখ্যা দুইটি। একটি হচ্ছে (১) সবর ও আরেকটি হচ্ছে আল্লাহর আয়াতে তথা (২) আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস। আর দৃঢ় বিশ্বাস তখনই হয় যখন জ্ঞান পরিপূর্ণ হয়। আর এটিকে আরো সুন্দরভাবে যদি বলি তাহলে হয়, কুরআনে বর্ণিত আছে- আল্লাহকে প্রকৃত যারা ভয় করে তাঁরাই জ্ঞানী বা জ্ঞানীরাই আল্লাহকে অধিক ভয় করে। আর আল্লাহকে অধিক ভয় করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি অধিক বিশ্বাস তথা দৃঢ় বিশ্বাস। কারণ আল্লাহকে বিশ্বাস না করলে সে কখনো আল্লাহকে ভয় করবে না, এটাই স্বাভাবিক।
তাহলে আমরা নেতা ও পরিচালক হওয়ার যে শর্ত কুরআন থেকে পাই তা হচ্ছে-
১। সবর তথা ধৈর্যশীল। এবং কঠিন মুহূর্তে ধৈর্যহারা না হয়ে আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলকারী।
২। আল্লাহর আয়াতে দৃঢ় বিশ্বাসী তথা জ্ঞানী ব্যক্তি।
তাহলে আমরা যদি এমন একজন ব্যক্তিকে নেই যিনি কোন কঠিন মুহূর্তে বিচলিত না হয়ে উল্টো ধৈর্যধারণ করে এবং এই ধৈর্য আল্লাহর প্রতি ঈমান থাকার কারণেই আসে। তাহলে তাঁর ধৈর্য হয় পাহাড় সমান। আর তিনিই নেতা হওয়ার জন্য। যেমন রসূল (সঃ) যখন যুদ্ধের ময়দানে কঠিন মুহূর্তে পড়েছিলেন তখন তাঁর সাহাবীরা বলছিল ধৈর্যহারা হয়ে যে- আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে, কিন্তু তখনও রসূল (সঃ) বিচলিত হননি। তিনিই তখন নেতা হওয়ার সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন একারণে।
এরপর যদি আমরা এমন একজন ব্যক্তিকে নেই যিনি জ্ঞানী, আল্লাহর আয়াতে দৃঢ় বিশ্বাসী, তাহলে তাঁর উপর আল্লাহর সাহায্য চলমান থাকে এবং তিনি সঠিক ফয়সালায় উপনীত হতে পারেন এবং দলকে সঠিকভাবে সৎ পথে পরিচালিত করতে পারেন।
এখন যদি এমন একজন ব্যক্তিকে ধরি যিনি অত্যন্ত সুদর্শন, সুঠামদেহের অধিকারী কিন্তু তাঁর ভিতর উপরের যেকোনো একটি নেই, যেমন তিনি বিপদে ধৈর্যহারা হয়ে যায় বা জ্ঞানহীন মূর্খ, আল্লাহর আয়াতে যথেষ্ট বিশ্বাসী না। তিনি কি কখনো নেতা হবে পারবে? কখনোই তা সম্ভব নয়। আল্লাহই এ বিষয়ে মহাজ্ঞানী, সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু উপরের দুই শর্ত যদি এমন কোন ব্যক্তির মধ্যে থাকে যিনি শারীরিকভাবে দুর্বল, দেখতে কুৎসিত, কালো কিংবা পঙ্গু? তাঁরপরও তিনি নেতা হওয়ার যোগ্য হবেন। তাঁর সেই জ্ঞান ও ধৈর্য দিয়ে তিনি দল বা জাতি পরিচালনা করতে পারবেন আর তাতে তাঁর কোন অসুবিধাই হবে না। এমনকি শুধু নেতা হওয়ার ক্ষেত্রেই নয় যুদ্ধেও সাহায্যকারী হিসেবে তিনি বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন।
একটি ঘটনা বর্ণিত আছে যে- মুসলিমদের সাথে কোন এক শত্রু গোষ্ঠীর যুদ্ধ হয়। এবং সেই শত্রুপক্ষ যখন কোন যুদ্ধে যেত তখন অন্ধ এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে যেত। যদিও সে সরাসরি যুদ্ধ করতো না কিন্তু যুদ্ধের ময়দান ও অবস্থা, সৈন্যদের সাজানো বেবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে তিনি পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযথ সিদ্ধান্ত দিতেন। তিনি যুদ্ধ সংক্রান্ত কৌশল বিষয়ে খুবই পারদর্শী ছিলেন এবং বৃদ্ধ বয়সে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে তিনি এক বীর যোদ্ধা ছিলেন। মুসলিমদের সাথে যুদ্ধের সময় তিনি সবকিছু শুনে বলেছিলেন তোমরা যুদ্ধে যেওনা কিন্তু তখন তাঁর কথা তাঁর জাতি মান্য করেনি এবং সেই গোষ্ঠী যুদ্ধে পরাজয়বরণ করে এবং মুসলিমরা জয়ী হয়। এ থেকেও বুঝা যায় যে- অন্ধ হওয়ার পরও যুদ্ধে কোন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তবে এটিও অনস্বীকার্য যে, যদি নেতা এই দুই গুণে গুণান্বিত হওয়ার পর দৈহিকভাবেও ত্রুটিহীন হয় তাহলে যেন সে পরিপূর্ণ। কিন্তু সেই দুই শর্ত ছাড়া আর কোন শর্ত আরোপ করা হবে- পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী। যা বর্তমানে কিছু আলীমরা বিরোধিতা করার জন্য করে যাচ্ছেন।
তবে কেউ যদি নবী হওয়ার শর্তে বলে থাকেন যে- নবীগণ শারীরিকভাবে ত্রুটিযুক্ত হবেন না তাহলে তাদের কথায় আমরা একমত হতে পারি। কারণ এ বিষয়ে কিছু বর্ণনা রয়েছে এবং ইতিহাস দেখলেও দেখা যায় নবীগণ সুঠামদেহী হতেন, তাদের শারীরিক ত্রুটি থাকতো না। সাধারণ কোন ত্রুটি যেগুলো আল্লাহ নিজ কুদরতে ঠিক করে দিয়েছিলেন সেগুলো ভিন্ন বিষয় যেমন- মুসা (আঃ) এর জবানের জড়তা এবং দোয়ার ফলে তা ভালো হয়ে যাওয়া।
অত্র উল্লিখিত সূরা সাজদাহ এর ২৪ নং আয়াতে আরো একটি বিষয় আসে যে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত করার বিষয়ে। আল্লাহ ইস-রা-য়েল জাতির যাদের মনোনীত করেছিল নেতা হিসেবে তাঁরা নবী ছিল না, নবীদের প্রতিনিধি ছিল। এবং এই বিষয় আমাদের সময়েও রয়েছে এবং হাদিসে তা বিশদভাবেই বর্ণিত হয়েছে তবে তাতে এমন কোনই শর্ত নেই যে সেই আমীরগণ শারীরিক ত্রুটিমুক্ত হবেন। তাঁর কিছু হাদিস-
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আমর ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রা:) এর নিকট আমার গোলাম নাফি’ মারফত পত্র পাঠালাম যে, আপনি আমাকে এমন কিছু সম্পর্কে অবহিত করুন যা আপনি রসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট শুনেছেন। রাবী বলেন, তিনি আমাকে লিখলেনঃ জুমার দিন সন্ধ্যায় যে দিন (মা’ইজ) আসলামীকে রজম করা হয়, সেদিন আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, এ দ্বীন অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষন কিয়ামত কায়েম হয় অথবা তোমরা বারজন খলীফা কর্তৃক শাসিত হও, এদের সকলেই হবে কুরায়শ থেকে।
আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, মুসলমানদের একটি ছোট দল জয় করবে শ্বেতভবন যা কিসরা (কিংবা কিসরা বংশের) মহল। আমি আরও বলতে শুনেছি, কিয়ামতের প্রাক্কালে অনেক মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে, তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং তার পরিবারস্থ লোকজনকে দিয়ে (ব্যয়) শুরু করবে। আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, হাওযে (কাওসারে) আমি তোমাদের অগ্রগামী হবো।
– (সহীহ মুসলিম ইসঃ ফাঃ ৪৫৬০)
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ জাহান্নামের দিকে আহবানকারী লোকদের আবির্ভাব হবে। যারা তাদের আহ্বানে সাড়া দিবে তাদেরকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের নিকট তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন। তিনি বলেনঃ তারা আমাদের মধ্য থেকে হবে এবং আমাদের ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম, তারা যদি আমাকে পায় তবে আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বলেনঃ তুমি অপরিহার্যরূপে মুসলিমদের সংঘভুক্ত থাকবে এবং তাদের ইমামের (আমীর বা খলীফার) আনুগত্য করবে। যদি মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ না থাকে এবং তাদের ইমামও না থাকে তাহলে তুমি তাদের সকল বিচ্ছিন্ন দল থেকে দূরে থাকো এবং কোন গাছের কান্ড আঁকড়ে ধরো এবং সেই অবস্থায় যেন তোমার মৃত্যু হয়।
– (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৩/৩৯৭৯; সহীহুল বুখারী ৩৬০৬; সহীহুল মুসলিম ১৮৪৭; আবূ দাউদ ৪২৪৪; মুসনাদে আহমাদ ২২৯৩৯; সহীহাহ ২৭৩৯)
হুযায়ফা (রা:) বলেনঃ লোকেরা রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর নিকট কল্যাণ ও মঙ্গলের বিষয়াদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো এবং আমি তাঁর নিকট অকল্যাণের বিষয়াদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম। এ কথা শুনে লোকেরা তাঁর প্রতি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাতে থাকলে, তিনি বলেনঃ আমার কথা যারা খারাপ মনে করে, আমি তাদের দেখতে পাচ্ছি। এরপর তিনি বলেন, একদা আমি বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! মহান আল্লাহ্ আমাদের যে কল্যাণ ও মঙ্গল দান করেছেন, এরপর কি আবার খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে, যেমন আগে ছিল? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। আমি বলিঃ এর থেকে বাঁচার ব্যবস্থা কি? তিনি বলেনঃ তরবারি। আমি জিজ্ঞাসা করিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এরপর কি হবে? তিনি বলেনঃ এ সময় পৃথিবীতে যদি আল্লাহ্র কোন প্রতিনিধি (খলীফা) থাকে এবং সে জুলুম করে তোমার পিঠ ভেঙ্গে দেয়, তোমার ধন-সম্পদ লুট করে নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য করবে। আর যদি এরূপ কেউ না থাকে, তবে তুমি জঙ্গলে চলে যাবে এবং গাছের লতা-পাতা খেতে খেতে মরে যাবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
– (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৪৪ [ইঃ ফাঃ ৪১৯৬]; আহমাদ)
হযরত হুযায়ফা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করত। আর আমি ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এই ভয়ে যেন আমি তাতে লিপ্ত না হই। একদিন আমি রসূল ﷺ এর নিকট বসা ছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যেই কল্যাণ দান করেছেন সেই কল্যাণে পর কি পুনরায় অকল্যাণ দান করেছেন। সেই কল্যাণের পর কি পুনরায় অকল্যাণ আসবে? যা পূর্বেও ছিল। তিনি বললেন হ্যাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম তারপর কি হবে? রসূল ﷺ বললেন, ধোকার উপর সন্ধি চুক্তি হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সন্ধিচুক্তির পর কি হবে? তিনি বললেন, কতিপয় আহ্বানকারী গোমরাহীর দিকে আহ্বান করবে। যদি তুমি তখন আল্লাহর কোন খলীফা (আল্লাহর মনোনীত আমীর বা ইমাম) এর সাক্ষাৎ পাও তাহলে অবশ্যই তার আনুগত্য করবে।
– (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৩৪; নুযুলে ঈসা ৩৯; এ বিষয়ে সহীহ সনদের হাদিস রয়েছে)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন, মুসা (আঃ) এর উপদেষ্টাদের মত আমার পরেও কতক খলীফা আত্নপ্রকাশ করবে।
– (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ২২৪; ইতহাফুল খিয়ারাতুল মাহারা ৬০১৩)
হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন, খেলাফতের জিম্মাদারী কুরাইশের বারোজন খলীফার দায়িত্বে থাকা পর্যন্ত সেটা খুবই সম্মানিত ও সুচারু রূপে পরিচালিত হবে।
– (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ২২৫; সহীহুল মুসলিম ৩৪০৪)
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রা:) এর সাথে পাঁচ বছর অবস্থান করেছি। আমি তার কাছে শুনেছি, নাবী ﷺ বলেছেনঃ বনি ইসরাঈলদের পরিচালনা (রাজত্ব) করতেন নাবীগণ। তাদের মধ্যকার একজন নাবী মৃত্যুবরণ করলে অপর একজন নাবী তাঁর স্থলালাভিষিক্ত হতেন। আমার পরে আর কোন নাবী নেই বরং খলীফাগণ হবেন এবং তারা সংখ্যায় প্রচুর হবেন। তখন সাহাবীগণ বললেনঃ তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ যার হাতে প্রথম বায়ঁআত (আনুগত্যের শপথ) করবে, তারই আনুগত্য করবে এবং তাদেরকে তাঁদের হক (অধিকার) প্রদান করবে, আর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের কর্তৃত্তাধীনে প্রদত্ত ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
– (সহীহ, সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৩৪/ রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রশাসন (كتاب الإمارة) | হাদিস নাম্বার: ৪৬২১)
হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) কে আমি বলতে শুনেছি। সত্য কে দৃঢ় রাখার জন্য বার জন আমীর আসবে অতঃপর হযরত নবী (ﷺ) আরও একটি কথা বলেছেন, যা আমি শুনতে পাইনি। (পরে) আমার পিতা বলেছেন, তাদের সকলেই কুরাইশ বংশের হবেন।
– (সহীহ, আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬৩)