






জনকল্যাণ বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে অনেকগুলো কার্যক্রমই আলহামদুলিল্লাহ্ বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে এই বিভাগের দায়িত্বশীলরা। সরাসরি কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হওয়া এই ডিপার্টমেন্টটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
বর্তমানে দুইটি কাজের আপডেট এর মধ্যে রয়েছে-
১। ছদকা ও দারিদ্র বিমোচন শাখা কর্তৃক ভাতা প্রদান।
২। কর্যে হাসানাহ তহবিল
১। ছদকা ও দারিদ্র বিমোচন শাখা কর্তৃক ভাতা প্রদানঃ
এই শাখা থেকে মূলত দরিদ্র, এতিম-অসহায় ব্যাক্তি কিংবা পরিবারকে কোন ধরণের বিনিময় ও কোন ধরণের শর্ত ছাড়া ভাতা প্রদান করা হয়। এই ভাতা বর্তমানে ত্রিমাসিক পদ্ধতিতে দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে চালু হয়েছে। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে এর পরিধি দেশব্যাপী বাড়বে। এই ভাতা দুইভাবে দেওয়া হয়-
(ক) ত্রিমাসিক নগদ অর্থ ভাতা
(খ) ত্রিমাসিক খাদ্যদ্রব্য ভাতা
এই সকল ভাতা দেওয়ার বর্তমান উৎসঃ
বাইতুল মাল বিভাগে জমা হওয়া সামর্থ্যবান লোকদের ছদকা, যাকাত, ফিতরা এবং খাদ্যদ্রব্য।
যাদের দেওয়া হয়ঃ
সরাসরি মাঠ পর্যায়ে সূক্ষভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক হকদারকে বাছাই করে।
২। কর্যে হাসানাহ তহবিলঃ
বিশ্বব্যাপী সুদ আজ মহামারী আকার ধারন করেছে। হাদিসে এসেছে – আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেদের মধ্যে এমন যুগ আসবে যখন একজন মানুষও সুদের ব্যবহার থেকে মুক্ত হতে পারবে না। সে প্রত্যক্ষভাবে সুদ না খেলেও সুদের ধোয়া বা ধূলা তাকে সংস্পর্শ করবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)
হাদিসটি জঈফ হলেও এর বাস্তবতা আজ মিলে যাচ্ছে। এই সুদ বেবস্থা যেখান থেকে তৈরি হয় অর্থাৎ ঋণ কিংবা কর্য দিয়ে সেই মূল জায়গাতেই আঘাত হানতে ইসলামে রয়েছে কর্যে হাসানাহ তথা সুদবিহীন ঋণ প্রদান ব্যবস্থা।
এটি যেহেতু একটি ঋণ তাই এতে সময়ের শর্ত থাকে এবং সময় শেষে অর্থ আবার ফেরত দিতে হয়। এটিও সঠিক প্রাপককে দেওয়া হয় যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে। এটি বাইতুল মালের কর্যে হাসানাহ হিসেবে আলাদা তহবিল থেকে প্রদান করা হয় এবং বাস্তবায়নে জনকল্যাণ বিভাগ কাজ করে থাকে।
বর্তমানে গ্রামে গ্রামে গরীব-অসহায়রা যখন কোন আর্থিক সংকটে পড়ে তখন ইচ্ছা না থাকলেও ছুটে যেতে হয় সুদী কারবারীর বিভিন্ন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট। অনেক সময় দেখা যায় সেই ঋণে সুদ বৃদ্ধি হয়ে তাঁর সে ঋণ দিয়ে উপকার করবে, তাঁর বদলে নিজের শেষ সম্পদও দিয়ে দিতে হয়। এভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেয়ে আরো বেশি গরীব হয়ে যায়। তাই ইসলামে এর জন্য সুন্দর ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে কর্যে হাসানাহ তথা উত্তম ঋণ।
এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা জানতে শরীয়ত থেকে কিছু দলিল উল্লেখ করেছি-
- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।[1]
- আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদাকাকে বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ কোন অতি কুফরকারী পাপীকে ভালবাসেন না।[2]
- হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা যুলম করবে না এবং তোমাদের যুলম করা হবে না।’[3]
ইবনে আববাস রা. বলেন, এটি শেষ আয়াত যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল।[4]
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমরা সুদ খাবে না বহুগুণ বৃদ্ধি করে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও।’[5]
- আল্লাহ তাআলা সুদ হারাম করেন আর ইহুদিরা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সুদ বৈধ করার চেষ্টা করে, সেদিকে ইঙ্গিত করে মহান রব বলেন- ‘আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।’[6]
- ‘আর তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলতঃ আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত।’[7]
- জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদদাতা, গ্রহীতা এবং এর লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ দিয়েছেন।’[8]
- সামুরা বিন জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘রাতে আমি দেখলাম, দু’জন লোক এসে আমার কাছে এলো। তারা আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে গেল। আমরা চলছিলাম, সহসা এক রক্ত নদীর পাড়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম যার মাঝে দন্ডায়মান এক ব্যক্তি। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তিকে দেখা গেল। সামনে তার পাথর। মাঝের লোকটি নদী পেরুনোর জন্য যেই সামনে অগ্রসর হয়, পাথর হাতে দাঁড়ানো ব্যক্তি অমনি তার মুখে পাথর মেরে তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়। এভাবে যখনই সে নদী পেরিয়ে আসতে চায়, লোকটি তখনই তার মুখে পাথর মেরে পেছনে ঠেলে দেয়। আমি বললাম, ব্যাপার কী ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যাকে নদীর মধ্যখানে দেখেছি সে সুদখোর।’[9]
- আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘ধ্বংসকারী সাতটি জিনিস থেকে বেঁচে থাক। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, সেগুলো কী কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শিরক করা, যাদু করা, অনুমোদিত কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী সরলা মুমিনা নারীকে ব্যাভিচারের অপবাদ দেয়া।’[10]
- ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘সুদের অর্থ দিয়ে যা-ই বৃদ্ধি করুক না কেন অল্পই কিন্তু তার শেষ পরিণাম।’[11]
- সালমান বিন আমর তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে বিদায় হজে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- ‘মনে রেখ জাহিলি যুগের সকল সুদ ভিত্তিহীন। তোমাদের জন্য শুধুই মূলধন। তোমরা জুলুম করবেও না এবং সইবেও না।’[12]
[1]. বাকারা : ২৭৫
[2]. বাকারা : ২৭৬
[3]. বাকারা : ২৭৮-২৭৯
[4]. ফাতহুল বারি : ৪/৩১৪
[5]. আলে ইমরান : ১৩০
[6]. নিসা : ১৬১
[7]. রুম : ৩৯
[8]. মুসলিম : ৭৫৯৭
[9]. বুখারি : ২০৮৫, ফাতহুল বারি : ৪/৩১৩
[10]. বুখারি : ২০১৫, মুসলিম : ৮৯
[11]. ইবনে মাজা : ২২৭৯। আলবানি সহি জামে সগিরে ৫/১২০ বলেছেন, এটি সহি হাদিস।
[12]. আবু দাউদ : ৩৩৩৪
আসসালামু আলাইকুম,
আমি মো: হেলাল উদ্দীন,
জেলা:চট্টগ্রাম
বয়স:৪১
আমি ইমাম মাহমুদ হাবিবুল্লাহ ভাইয়ের সংগঠন ইমাম মাহমুদ এর কাফেলায় যুক্ত হতে চাই,
ঠিকানা এবং যোগাযোগ এর মাধ্যম দিয়ে সহযোগিতা করলে বড়ই উপকৃত হবো,
এই আইডিতে যোগাযোগ করুন- https://t.me/anmdak